×
Victory
কঠোর লকডাউনের দাবি জানিয়ে পিটিশনের সমাপ্তি
Concerned C.
started this petition to
Government of Bangladesh
"আসন্ন ভয়াবহ সংক্রমণ এবং মৃত্যু এড়াতে কঠোর লকডাউনের দাবি" এই শিরোনামের পিটিশন এর উপর এক সপ্তাহের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের সমাপ্তি ঘটেছে। ৩১শে মে থেকে ৬ই জুন পর্যন্ত পরিচালিত এই পিটিশনে দেড় হাজারের উপর ব্যক্তির স্বাক্ষর সংগৃহীত হয়েছে। যারা তাঁদের মূল্যবান সময় ব্যয় করে এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। এই আবেদনে যারা স্বাক্ষর করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সারা দেশের বরেণ্য নাগরিকবৃন্দসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, গবেষক, চাকুরীজীবী, ব্যাবসায়ীদের অনেকে। পিটিশনের সাইটটি (avaaz.org) দুঃখজনক ভাবে বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রিত (restricted) হওয়ার কারণে অনেকেই আবেদনের পেইজটি খুলতে পারেননি, এবং কেউ কেউ আমাদের জানিয়েছেন। এই প্রতিবন্ধকতাটি না থাকলে আরও অনেক নাগরিক তাঁদের সমর্থন জানাতে পারতেন।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময় ৩১ শে মে থেকে সাধারণ ছুটি বন্ধ করে আবার সবধরনের কার্যক্রম শুরু করার সরকারী ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এই পিটিশনটি শুরু করা হয়। এইভাবে অর্থনীতি এবং সমাজ ব্যবস্থার সকল কার্যক্রম শুরু করে দেয়ার ফলাফল আত্মঘাতী হতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমরা পিটিশনে এ-ও উল্লেখ করেছি যে মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, এবং সংক্রমণ কমিয়ে না আনলে এর প্রকোপ আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে, এবং আমরা যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করি, তাঁরা আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন, ইতিমধ্যে যেমন করেছে জাপান। আমরা এই লকডাউন কার্যকর করার পূর্বশর্ত হিসেবে বারবার অভাবী মানুষদের খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার সংস্থানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছি। আমরা বিগত সপ্তাহে আরও দেখেছি যে "রিসারজেন্ট বাংলাদেশ" শীর্ষক ব্যাবসায়ীদের একটি ফোরাম থেকে স্পষ্টভাবে ১৫ দিনের লকডাউন দাবী তুলে তাঁরা বলেছেন যে একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকির মুখে ফেললে তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতি পোহাতে হবে। তার চেয়ে স্বল্পকালীন কিছু আর্থিক ক্ষতি মেনে নেয়া হবে একটি বিবেচক সিদ্ধান্ত।
আমরা এই সপ্তাহে দেখছি যে সরকার জোনিং এবং আংশিক লকডাউন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ধরণের গণমুখী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে এটি একটি চলমান সংকট, এবং সরকারকে দক্ষতার সাথে এর মোকাবেলা করতে হলে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। সঠিক তথ্য-উপাত্ত উন্মুক্ত করে, টেস্টিং, ট্রেসিং, পৃথকীকরণ, চিকিৎসা ইত্যাদি ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য যথাযথ সমন্বয়ই হবে এই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।
দীর্ঘ সময়ের লকডাউন আমাদের কারুরই কাম্য নয়, এবং আমাদের মূল চাওয়া ছিল স্বল্পতম সময়ে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে এনে যাতে আবার স্বাভাবিক জীবনের দিকে আমরা যাত্রা করতে পারি। তাছাড়া এটিও বলাবাহুল্য যে লকডাউন কার্যকর করতে হবে আমাদের দেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই। আমরা আশা করি যে মহামারীর এই সময়টিকে জরুরি অবস্থা হিসেবে গণ্য করে, স্বল্পকালীন লাভের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে আমরা যাতে দ্রুত এই মহামারীর প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি, সেই লক্ষ্যে সরকার দ্রুত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচক্ষণ নেতৃত্বের পরিচয় দেবে।
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময় ৩১ শে মে থেকে সাধারণ ছুটি বন্ধ করে আবার সবধরনের কার্যক্রম শুরু করার সরকারী ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এই পিটিশনটি শুরু করা হয়। এইভাবে অর্থনীতি এবং সমাজ ব্যবস্থার সকল কার্যক্রম শুরু করে দেয়ার ফলাফল আত্মঘাতী হতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আমরা পিটিশনে এ-ও উল্লেখ করেছি যে মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, এবং সংক্রমণ কমিয়ে না আনলে এর প্রকোপ আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে, এবং আমরা যেসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করি, তাঁরা আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন, ইতিমধ্যে যেমন করেছে জাপান। আমরা এই লকডাউন কার্যকর করার পূর্বশর্ত হিসেবে বারবার অভাবী মানুষদের খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার সংস্থানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছি। আমরা বিগত সপ্তাহে আরও দেখেছি যে "রিসারজেন্ট বাংলাদেশ" শীর্ষক ব্যাবসায়ীদের একটি ফোরাম থেকে স্পষ্টভাবে ১৫ দিনের লকডাউন দাবী তুলে তাঁরা বলেছেন যে একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকির মুখে ফেললে তার জন্য দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ক্ষতি পোহাতে হবে। তার চেয়ে স্বল্পকালীন কিছু আর্থিক ক্ষতি মেনে নেয়া হবে একটি বিবেচক সিদ্ধান্ত।
আমরা এই সপ্তাহে দেখছি যে সরকার জোনিং এবং আংশিক লকডাউন কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ধরণের গণমুখী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে এটি একটি চলমান সংকট, এবং সরকারকে দক্ষতার সাথে এর মোকাবেলা করতে হলে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। সঠিক তথ্য-উপাত্ত উন্মুক্ত করে, টেস্টিং, ট্রেসিং, পৃথকীকরণ, চিকিৎসা ইত্যাদি ব্যবস্থাকে জোরদার করার জন্য যথাযথ সমন্বয়ই হবে এই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।
দীর্ঘ সময়ের লকডাউন আমাদের কারুরই কাম্য নয়, এবং আমাদের মূল চাওয়া ছিল স্বল্পতম সময়ে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে এনে যাতে আবার স্বাভাবিক জীবনের দিকে আমরা যাত্রা করতে পারি। তাছাড়া এটিও বলাবাহুল্য যে লকডাউন কার্যকর করতে হবে আমাদের দেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই। আমরা আশা করি যে মহামারীর এই সময়টিকে জরুরি অবস্থা হিসেবে গণ্য করে, স্বল্পকালীন লাভের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে আমরা যাতে দ্রুত এই মহামারীর প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারি, সেই লক্ষ্যে সরকার দ্রুত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিচক্ষণ নেতৃত্বের পরিচয় দেবে।
আরও একমাসের কঠোর লকডাউন পালনের পাশাপাশি খাদ্য ও অর্থ-সাহায্যসহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতির জোর দাবি
মে ৩১ থেকে জুন ১৫ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘সীমিত পরিসরে’ অফিস-আদালত, গণ-পরিবহন, স্টক মার্কেট, বাজার-ঘাট ইত্যাদি খোলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সরকার। এর ফলাফল আত্মঘাতী হতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন। দীর্ঘ সময়ের লকডাউন আমাদের কারুরই কাম্য নয়, এবং আমাদের মূল চাওয়া হলো স্বল্পতম সময়ে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে এনে যাতে আবার স্বাভাবিক জীবনের দিকে আমরা যাত্রা করতে পারি। এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদ ও বিশেষজ্ঞদের নিবন্ধ থেকে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। তার ভিত্তিতেই এই আবেদনপত্রে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে: আরও এক মাস কঠোর লকডাউন পালনের পাশাপাশি খাদ্য ও অর্থ-সাহায্য সহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতিই হবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে সময়োচিত পদক্ষেপ। (তথ্যসূত্রসমূহ আবেদন পত্রটির শেষে সংযুক্ত)
"লকডাউন" এখন উঠিয়ে নিলে যা হতে পারে
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি
মার্চের ২৬ থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো দুই-মাস ব্যাপী “সাধারণ ছুটি”টি দেশের মানুষ সে অর্থে “লকডাউন” হিসেবে পালন করেনি; মানুষকে সঠিক তথ্য জানানোর প্রক্রিয়ায় অনেকটা অস্পষ্টতা এবং প্রয়োগের শৈথিল্য ছিল। ক্রমে আমরা লক্ষ্য করেছি যে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং হট-স্পট নগরাঞ্চলগুলি থেকে দ্রুত তা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। সংক্রমণের গতি এখন ঊর্ধ্বমুখী -- এপ্রিলে যা ৯.৫% ছিল মে মাসের শেষে ২২%-এ দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় একটি দেশের সংক্রমণ যে পর্যায়ে এলে “লকডাউন” শিথিল করা যেতে পারে বলে উল্লেখ রয়েছে, আমরা সেই শর্তপূরণ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি।
ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ধস
কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে থেকেই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। এখন সেটি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ার অবস্থায় এসেছে। করোনার জন্য তো বটেই, অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও আমরা দেখছি কিভাবে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ছে। এই সময়ে লকডাউন উঠিয়ে "স্বাভাবিক" অবস্থায় ফেরা এই ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছু হবে না। একটি অপ্রতুল ও নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, এবং ব্যাপক মৃত্যুমিছিলের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী গভীর আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে আজ।
হার্ড ইমিউনিটির নিশ্চিত ভয়াবহতা
বিশ্বের সকল দেশ যখন হার্ড ইমিউনিটির (herd immunity) পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তখন আমরা “লকডাউন” তুলে দেয়ার মাধ্যমে ঠিক সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছি। কোন সংক্রামক রোগের বিপরীতে টীকা প্রয়োগ ছাড়া এ যাবৎ পৃথিবীতে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের নজির নেই। করোনার ক্ষেত্রে এই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে কি ঘটতে হবে, তার কোন পরীক্ষিত তথ্য নেই। কেউ কেউ বলছেন অন্ততঃ ৭০-৮০% ভাগ জনগোষ্ঠীকে সংক্রমিত হতে হবে। তার মানে দাঁড়ায় যে,
অসংখ্য ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, পুলিশ সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীজীবি ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, এবং অনেক প্রিয়জনদের আমরা হারিয়েছি। এখন আর কারো মনে কোন সন্দেহ নেই যে এই ১৫-২০ লক্ষ মানুষকে আমরা হারাবো সমাজের বিভিন্ন কাতারে, আমাদের কাছের মানুষদের মধ্য থেকেই। খেটে-খাওয়া পরিবারগুলির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যখন মারা যাবেন তখন কত সংখ্যক পরিবার যে কঠিন দুর্দশার মাঝে পড়বে, এবং রাষ্ট্রের জন্য সেটি কতখানি বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি করবে, সেটিও ভাবার প্রয়োজন আছে।
ব্যবসা ও অর্থনীতির জন্য এই সিদ্ধান্ত কি কি বিপদ বয়ে আনবে?
এই ক্ষতির চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বড় হতে পারে না। বরঞ্চ নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে সংক্রমণ বাড়তে দিলে অচিরেই ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখে পড়বে। উপরন্তু গোটা দুনিয়াতে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তখন হয়তো দেখা যাবে আমরা করোনা-প্রকোপিত অঞ্চল হিসেবে বাকি দুনিয়ার অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। প্রবাসী শ্রমিকরা সময়মত কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না, তাদের বদলে অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হবে। আমদানি ও রফতানিতেও আমরা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বো।
সম্ভাব্য নৈরাজ্য
পাশাপাশি আমাদের চেনাজানা আর ভালোবাসার মানুষগুলি যখন আমাদের ছেড়ে দ্রুত চলে যেতে থাকবেন, এবং একটি দুর্বল প্রশাসন ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা যখন একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হবে, তখন হয়তো আরও ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের দিকেই আমরা দ্রুত ধাবিত হবো। এধরণের নৈরাজ্যের নিদর্শন আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছি।
আসন্ন এই বিপদ এড়াতে এই মুহূর্তে যা যা করণীয়
আমরা এখন সংকটের যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি তাতে সঠিক ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়ার এটিই সম্ভবত সর্বশেষ সুযোগ । তথ্য ও নির্দেশনার সংকটের কারণে মহামারীর শুরুর সময়টিতে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বা তার শিথিল প্রয়োগ হয়তো ঘটেছিলো, কিন্তু এখন আর সেই ভুলগুলি করার কোন অবকাশ নেই , বরং এই পর্যায়ে দেশের আপামর জনগণ দিকভ্রান্ত হলে তার মাশুল গুণতে হবে অনেক বেশি । এমন একটি ক্রান্তিকালে আমাদের রাষ্ট্রের নেতৃত্ব বিচক্ষণ অভিভাবক ও সত্যিকার যোদ্ধার মতো বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, জনমানুষের নিরাপত্তা ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতিকে এই মহামারীর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করবেন, এটিই আমাদের সম্মিলিত প্রত্যাশা।
আমাদের উপরোক্ত বক্তব্য আরো বিস্তারিত ভাবে সম্প্রতি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আলোচিত হয়েছে। লিংকঃ
https://www.prothomalo.com/opinion/article/1659673/
তথ্যসূত্র:
‘জুনের মাঝামাঝি করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা’, আইইডিসিআর, 28 May 2020https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/05/28/533823
Rahman, Ashikur, ‘Last window to tame the beast’, Dhaka Tribune, 24 May 2020 https://www.dhakatribune.com/opinion/op-ed/2020/05/24/last-window-to-tame-the-beast?fbclid=IwAR10iENzP8y5GWhxIavRcMQMBFGY9f66xqiTdEw4Gehfv7kI6GknAEweIzo
‘বিশেষজ্ঞরা এই সময়ে কারফিউ চান’, প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০, purboposhchimbd.newshttps://www.ppbd.news/national/160197
‘Coronavirus: Japan includes Bangladesh in widened entry ban’, UNB News, 26 May 2020http://www.unb.com.bd/category/Bangladesh/coronavirus-japan-includes-bangladesh-in-widened-entry-ban/52114
করোনা নিয়ে সতর্ক করল জাতীয় পরামর্শক কমিটি: ‘স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হলে ব্যাপকহারে বাড়তে পারে রোগীর সংখ্যা’, UNB News, 28 May 2020.
মে ৩১ থেকে জুন ১৫ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘সীমিত পরিসরে’ অফিস-আদালত, গণ-পরিবহন, স্টক মার্কেট, বাজার-ঘাট ইত্যাদি খোলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন সরকার। এর ফলাফল আত্মঘাতী হতে পারে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন। দীর্ঘ সময়ের লকডাউন আমাদের কারুরই কাম্য নয়, এবং আমাদের মূল চাওয়া হলো স্বল্পতম সময়ে সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে এনে যাতে আবার স্বাভাবিক জীবনের দিকে আমরা যাত্রা করতে পারি। এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদ ও বিশেষজ্ঞদের নিবন্ধ থেকে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। তার ভিত্তিতেই এই আবেদনপত্রে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে: আরও এক মাস কঠোর লকডাউন পালনের পাশাপাশি খাদ্য ও অর্থ-সাহায্য সহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুতিই হবে এই মুহূর্তের সবচেয়ে সময়োচিত পদক্ষেপ। (তথ্যসূত্রসমূহ আবেদন পত্রটির শেষে সংযুক্ত)
"লকডাউন" এখন উঠিয়ে নিলে যা হতে পারে
সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি
মার্চের ২৬ থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো দুই-মাস ব্যাপী “সাধারণ ছুটি”টি দেশের মানুষ সে অর্থে “লকডাউন” হিসেবে পালন করেনি; মানুষকে সঠিক তথ্য জানানোর প্রক্রিয়ায় অনেকটা অস্পষ্টতা এবং প্রয়োগের শৈথিল্য ছিল। ক্রমে আমরা লক্ষ্য করেছি যে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং হট-স্পট নগরাঞ্চলগুলি থেকে দ্রুত তা সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। সংক্রমণের গতি এখন ঊর্ধ্বমুখী -- এপ্রিলে যা ৯.৫% ছিল মে মাসের শেষে ২২%-এ দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় একটি দেশের সংক্রমণ যে পর্যায়ে এলে “লকডাউন” শিথিল করা যেতে পারে বলে উল্লেখ রয়েছে, আমরা সেই শর্তপূরণ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছি।
ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ধস
কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে থেকেই আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল ছিল। এখন সেটি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ার অবস্থায় এসেছে। করোনার জন্য তো বটেই, অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও আমরা দেখছি কিভাবে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ছে। এই সময়ে লকডাউন উঠিয়ে "স্বাভাবিক" অবস্থায় ফেরা এই ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া আর কিছু হবে না। একটি অপ্রতুল ও নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, এবং ব্যাপক মৃত্যুমিছিলের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী গভীর আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে আজ।
হার্ড ইমিউনিটির নিশ্চিত ভয়াবহতা
বিশ্বের সকল দেশ যখন হার্ড ইমিউনিটির (herd immunity) পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, তখন আমরা “লকডাউন” তুলে দেয়ার মাধ্যমে ঠিক সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছি। কোন সংক্রামক রোগের বিপরীতে টীকা প্রয়োগ ছাড়া এ যাবৎ পৃথিবীতে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের নজির নেই। করোনার ক্ষেত্রে এই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করতে হলে কি ঘটতে হবে, তার কোন পরীক্ষিত তথ্য নেই। কেউ কেউ বলছেন অন্ততঃ ৭০-৮০% ভাগ জনগোষ্ঠীকে সংক্রমিত হতে হবে। তার মানে দাঁড়ায় যে,
- বাংলাদেশের অন্ততঃ ১২ কোটি মানুষকে আক্রান্ত হতে হবে, এবং
- ১৫-২০ লক্ষ মানুষের নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
অসংখ্য ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, পুলিশ সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সরকারি ও বেসরকারি চাকুরীজীবি ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, এবং অনেক প্রিয়জনদের আমরা হারিয়েছি। এখন আর কারো মনে কোন সন্দেহ নেই যে এই ১৫-২০ লক্ষ মানুষকে আমরা হারাবো সমাজের বিভিন্ন কাতারে, আমাদের কাছের মানুষদের মধ্য থেকেই। খেটে-খাওয়া পরিবারগুলির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি যখন মারা যাবেন তখন কত সংখ্যক পরিবার যে কঠিন দুর্দশার মাঝে পড়বে, এবং রাষ্ট্রের জন্য সেটি কতখানি বাড়তি অর্থনৈতিক বোঝা তৈরি করবে, সেটিও ভাবার প্রয়োজন আছে।
ব্যবসা ও অর্থনীতির জন্য এই সিদ্ধান্ত কি কি বিপদ বয়ে আনবে?
এই ক্ষতির চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষতি বড় হতে পারে না। বরঞ্চ নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে সংক্রমণ বাড়তে দিলে অচিরেই ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখে পড়বে। উপরন্তু গোটা দুনিয়াতে যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তখন হয়তো দেখা যাবে আমরা করোনা-প্রকোপিত অঞ্চল হিসেবে বাকি দুনিয়ার অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। প্রবাসী শ্রমিকরা সময়মত কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন না, তাদের বদলে অন্য দেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হবে। আমদানি ও রফতানিতেও আমরা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বো।
সম্ভাব্য নৈরাজ্য
পাশাপাশি আমাদের চেনাজানা আর ভালোবাসার মানুষগুলি যখন আমাদের ছেড়ে দ্রুত চলে যেতে থাকবেন, এবং একটি দুর্বল প্রশাসন ও অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা যখন একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হবে, তখন হয়তো আরও ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের দিকেই আমরা দ্রুত ধাবিত হবো। এধরণের নৈরাজ্যের নিদর্শন আমরা ইতিমধ্যে দেখতে পেয়েছি।
আসন্ন এই বিপদ এড়াতে এই মুহূর্তে যা যা করণীয়
- জুন ১ থেকে এক মাসের জন্য দেশব্যাপী কারফিউ আকারে কঠোর লকডাউনের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিতে হবে, যাতে কোনপ্রকার অস্পষ্টতার অবকাশ না থাকে।
-
এই কঠোর লকডাউনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মূলত লকডাউন তুলে দেয়ার আগে
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী কিছু শর্ত পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সময় নেয়া
। বেশীরভাগ দেশ যারা লক ডাউন শিথিল করেছে বা উঠিয়ে নিয়েছে তাঁরা আগে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে:
- প্রচুর পরিমাণে টেস্টিং এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং এর সক্ষমতা অর্জন
- হাসপাতালগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি
- প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়া
- সরকারি-বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের “নিউ নরমাল” পরিস্থিতিতে পরিচালনার গাইডলাইন তৈরী হওয়া
- টেস্টিং বাড়াতে হবে ব্যাপক আকারে, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ন্যূনতম ব্যয়ে রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা যাতে করা যায় তার জন্য আর কোনো সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- সরকারি তহবিল থেকে অবিলম্বে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করে ভাসমান ও কর্মহীনদের জন্য অবশ্যই অন্তত এক মাসের খাবার ও জরুরি ওষুধের সংস্থান করতে হবে । আমাদের খাদ্য মজুদের যথাযথ ব্যবহার করে অন্তত ৩ কোটি পরিবারকে বাড়িতে চাল পৌঁছে দেয়া এবং এই ৩ কোটি পরিবারকে চলবার জন্য ৫ হাজার টাকা করে ১৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ একমাসের এই কার্যকরী লক ডাউনের আবশ্যকীয় শর্ত হতে হবে।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অন্ততঃ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত, অথবা পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে ।
- মাস্কের যথাযথ ব্যবহার কঠোর ভাবে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
-
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সর্বস্তরের নাগরিকের আচরণ পরিবর্তন করতে তাদের সংস্কৃতি, ভাষা এবং যাপিত বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে তৈরি করা সুনির্দিষ্ট বার্তা প্রয়োজন হবে । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এবং অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে এধরণের বার্তা তৈরি ও প্রচার করার মাধ্যমেই শুধুমাত্র মানুষকে পর্যাপ্তভাবে সচেতন করা সম্ভব।
আমরা এখন সংকটের যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি তাতে সঠিক ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেয়ার এটিই সম্ভবত সর্বশেষ সুযোগ । তথ্য ও নির্দেশনার সংকটের কারণে মহামারীর শুরুর সময়টিতে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বা তার শিথিল প্রয়োগ হয়তো ঘটেছিলো, কিন্তু এখন আর সেই ভুলগুলি করার কোন অবকাশ নেই , বরং এই পর্যায়ে দেশের আপামর জনগণ দিকভ্রান্ত হলে তার মাশুল গুণতে হবে অনেক বেশি । এমন একটি ক্রান্তিকালে আমাদের রাষ্ট্রের নেতৃত্ব বিচক্ষণ অভিভাবক ও সত্যিকার যোদ্ধার মতো বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, জনমানুষের নিরাপত্তা ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতিকে এই মহামারীর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত করবেন, এটিই আমাদের সম্মিলিত প্রত্যাশা।
আমাদের উপরোক্ত বক্তব্য আরো বিস্তারিত ভাবে সম্প্রতি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আলোচিত হয়েছে। লিংকঃ
https://www.prothomalo.com/opinion/article/1659673/
তথ্যসূত্র:
‘জুনের মাঝামাঝি করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা’, আইইডিসিআর, 28 May 2020https://www.bd-pratidin.com/coronavirus/2020/05/28/533823
Rahman, Ashikur, ‘Last window to tame the beast’, Dhaka Tribune, 24 May 2020 https://www.dhakatribune.com/opinion/op-ed/2020/05/24/last-window-to-tame-the-beast?fbclid=IwAR10iENzP8y5GWhxIavRcMQMBFGY9f66xqiTdEw4Gehfv7kI6GknAEweIzo
‘বিশেষজ্ঞরা এই সময়ে কারফিউ চান’, প্রকাশ: ২৮ মে ২০২০, purboposhchimbd.newshttps://www.ppbd.news/national/160197
‘Coronavirus: Japan includes Bangladesh in widened entry ban’, UNB News, 26 May 2020http://www.unb.com.bd/category/Bangladesh/coronavirus-japan-includes-bangladesh-in-widened-entry-ban/52114
করোনা নিয়ে সতর্ক করল জাতীয় পরামর্শক কমিটি: ‘স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হলে ব্যাপকহারে বাড়তে পারে রোগীর সংখ্যা’, UNB News, 28 May 2020.
Posted
(Updated )
Report this as inappropriate
There was an error when submitting your files and/or report.